বাংলাদেশের জুতা কোম্পানির ইতিহাস

বাংলাদেশের জুতা কোম্পানির ইতিহাস নিয়ে আমি একটি আর্টিকেল লিখেছি। আশা করি আপনার জন্য এটি উপকারী হবে।







বাংলাদেশের জুতা শিল্প একটি প্রাচীন ও গৌরবময় শিল্প। বাংলাদেশের জুতা শিল্পের উৎপত্তি প্রায় ১০০ বছর আগের কথা, যখন চামড়া শিল্প এবং কারুকালা শিল্পের সমন্বয়ে জুতা তৈরি শুরু হয়। তখন জুতা তৈরি করা হতো হস্তকর্ম ও স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জুতা শিল্পের বিকাশের পথে কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করেছে। এই পর্যায়গুলি হলো-


- প্রথম পর্যায় (১৯৩০-১৯৭০): 


এই পর্যায়ে বাংলাদেশের জুতা শিল্প স্থানীয় বাজারের জন্য উৎপাদন করতো। এই সময়ে বাংলাদেশের জুতা শিল্পের প্রধান নির্মাতা ছিলেন বাটা, যা ১৯৬২ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাটা ছাড়াও অন্যান্য কিছু স্থানীয় কোম্পানি যেমন কুমিল্লার কুমিল্লা শুটিং কোম্পানি, ঢাকার সানডাল কোম্পানি, চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম শুটিং কোম্পানি ইত্যাদি জুতা উৎপাদন করতো। এই পর্যায়ে জুতা তৈরি করা হতো মূলত চামড়া, কাঠ, ক্যানভাস ও রাবার থেকে।


- দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৭০-১৯৯০): 


এই পর্যায়ে বাংলাদেশের জুতা শিল্প বিশ্বব্যাপী বাজারের জন্য উৎপাদন করতো। এই সময়ে বাংলাদেশের জুতা শিল্পের প্রধান নির্মাতা ছিলেন এপেক্স, যা ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এপেক্স ছাড়াও অন্যান্য কিছু কোম্পানি যেমন পিকাসো, লেথারেক্স, বেনজির, ইত্যাদি জুতা উৎপাদন করতো। এই পর্যায়ে জুতা তৈরি করা হতো মূলত চামড়া, প্লাস্টিক ও অন্যান্য পেট্রোরাসায়নিক থেকে প্রাপ্ত উপকরণ ব্যবহার করে।


- তৃতীয় পর্যায় (১৯৯০-বর্তমান): 


এই পর্যায়ে বাংলাদেশের জুতা শিল্প বিশ্বব্যাপী বাজারের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও উৎপাদন করতো। এই সময়ে বাংলাদেশের জুতা শিল্পের প্রধান নির্মাতা ছিলেন বাটা, এপেক্স, ওয়াকার, লেথারেক্স, বেনজির, পিকাসো, ইত্যাদি। এছাড়াও অনেক কোম্পানি তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে স্থানীয় বাজারে প্রবেশ করেছে। এই পর্যায়ে জুতা তৈরি করা হয় মূলত চামড়া, প্লাস্টিক, রাবার, ক্যানভাস। আর্টিকেলটি এখানে শেষ হয় না। আমি আরও কিছু তথ্য যোগ করেছি।


এই পর্যায়ে বাংলাদেশের জুতা শিল্প বিভিন্ন ধরণের জুতা উৎপাদন করে, যেমন স্নিকার্স, বুট, স্যান্ডেল, লোফার, হাইল, ফ্ল্যাট, ইত্যাদি। বাংলাদেশের জুতা শিল্প বিশ্বের বৃহত্তম জুতা রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে একটি। বাংলাদেশের জুতা শিল্প প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি ডলারের মানের জুতা রপ্তানি করে। বাংলাদেশের জুতা শিল্পের প্রধান রপ্তানি বাজার হলো ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইত্যাদি।


বাংলাদেশের জুতা শিল্প বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশের জুতা শিল্প প্রায় ১০ লাখ মানুষকে চাকরি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের জুতা শিল্প চামড়া শিল্পের সাথে সমন্বিত ভাবে কাজ করে এবং চামড়ার উপযোগী ব্যবহার ও নিরাপদ নিষ্কাশনের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জুতা শিল্প বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক বিনিময় করে এবং জুতা শিল্পের উন্নয়নের জন্য গবেষণা ও প্রশিক্ষণ করে।


বাংলাদেশের জুতা শিল্প একটি সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় শিল্প। বাংলাদেশের জুতা শিল্প বিশ্বের জুতা শিল্পের মধ্যে একটি অনন্য অবদান রাখে। বাংলাদেশের জুতা শিল্প আরও উন্নতি করার জন্য নতুন প্রযুক্তি, ডিজাইন, মান নিয়ন্ত্রণ, বাজার বিস্তার, সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা, ইত্যাদির প্রয়োজন। বাংলাদেশের জুতা শিল্প এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করতে পারলে, তাহলে এটি বিশ্বের জুতা শিল্পের একটি শীর্ষ অংশ হিসেবে স্থাপন করতে পারবে।



No comments:

Post a Comment

১০ হাজার টাকার মধ্যে কোন জুতা কিনা উচিত?

  আপনি যদি  ১০ হাজার টাকার মধ্যে কোন জুতা কিনতে চান, তাহলে আপনার জন্য কিছু পরামর্শ দিতে পারি। প্রথমে, আপনার জুতা কেনার উদ্দেশ্য কি তা বেছে ন...