বাটা জুতা কোম্পানির অজানা ইতিহাস


এবারের ঈদে রোকন একটি ভালো মানের জুতা কিনবে বলে ঠিক করেছে কিন্তু কোন ব্রান্ডের জুতা কিনবে সেটার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কারণ বাজার অনেক ব্রান্ডের জুতা পাওয়া যাচ্ছে, যেমন বাটা, এপেক্স, লোটো, জেইলসসহ আরো অনেক। রোকন বিষয় টি তার বন্ধু রিপনকে খুলে বলাতে সে এক সেকেন্ডেই তার সমস্যার সমাধান করে দিলো। রিপন রোকনকে বাটা ব্রান্ডের জুতা কিনতে পরামর্শ দিলো কারণ বাটা হচ্ছে বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বে জুতার জগতে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্রান্ড। জুতা শিল্প জগতে বিশ্বজোড়া পুরনো ও খ্যাতিমান নাম হচ্ছে বাটা। মোবাইল ফোন জগতে যেমন নকিয়া একটা ব্রান্ড নাম ঠিক তেমনি জুতার জগতে বাটা একটা বিশস্ত ব্রান্ড নাম। জুতো মানে বাটা আর বাটা মানেই জুতা। অন্যান্য দেশের মতো সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে বাটা। এই বাটা অজানা ইতিহাস নিয়ে আমাদের আজকের এই লেখা। বাটা জুতোর জনক হচ্ছেন টমাস জে বাটা। টমাস যে বাটা জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন ইউরোপীয় দেশ চেকোস্লোভাকিয়ার জিলিন শহরে। টমাসরা তিনভাইবোন, দুই ভাই আর এক বোন। টমাসের পূর্বপুরুষেরা মূলত জুতো সেলাই পেশার সাথে জড়িত ছিলো। টমাস ছোট থেকে বড় হয়েছেন চামড়া জুতার সাথে খেলাধুলা করে। টমাস চাইছিলো পূর্বপুরুষের পেশাটাকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়। ছোট পরিসর থেকে বেড়িয়ে বড় পরিসরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। তার এই সপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ১৮৯৪ সালের ২৪ আগস্ট টমাস জে বাটা আর তার ভাই এনটোনিন ও বোন এনাকে সাথে নিয়ে জিলিন শহরে একটি ছোট্ট দোকান ভাড়া নেয়। তখন তাদের হাতে মাত্র ৩২০ ডলার পূজি। তারা এই পুজিকে সম্বল করে কিস্তিতে সেলাই মেশিন কিনে টিএন্ডএ বাটা নামে জুতার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৯৫ সালে টমাসের বড় ভাই চাকুরি পাওয়ায় এবং বোন এনার বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে তারা ব্যবসা ছেড়ে চলে যায়। ১৯ বছরের টমাস সদ্য জন্ম হওয়া বাটা কোম্পানি নিয়ে একলা পরে যায়। একই বছর বাটা কোম্পানি আর্থিক সংকটে ধুকতে শুরু করে। বাটা কোম্পানি শুরু না হতেই শেষের উপক্রমে এসে পড়ে। কিন্তু তরুন টমাস দমে যায় না। সে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় যে বাটা কোম্পানি প্রচলিত ডিজাইনের বাইরে নতুন ডিজাইনের জুতো বানাবে। যে বলা সেই কাজ। বাটা তাদের প্রথম ব্রান্ড জুতা "বাটোভকা" বাজারে আনে। এই জুতা বাটার ভবিষ্যৎই পরিবর্তন করে দেয়। বাটার জুতা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে এবং সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে কোম্পানির কর্মী সংখ্যা, প্রথমে ১০ জন এরপর তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০জন। বাটা কোম্পানির সামনে আরো একটি চ্যালেঞ্জ হাজির হয় তা হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর মেশিন চালিত জুতার কাছে বাটা কোম্পানি মার খেতে শুরু করে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯০৪ টমাস তার বিশস্ত ও দক্ষ তিনজন কর্মীসহ আমেরিকায় পাড়ি জমায় আর সেখানে গিয়ে সেখানকার মেশিনচালিত বিখ্যাত এক জুতা কোম্পানিতে চাকুরি নেয়। সেখানে তারা মেশিনের মাধ্যমে কিভাবে জুতা বানায় তা শিখতে থাকতে। সবকিছু শেখা শেষে ছয় মাস পর তারা ফিরে আসে। এরপর বাটা কোম্পানি ইউরোপে প্রথম মেশিন চালিত জুতা বানানো শুরু করে এবং আধুনিক জুতা শিল্পের সুচনা করে। এরফলে বাটার জুতার কোয়ালিটি আর উৎপাদন দুটোই বৃদ্ধি পায় যার ফলে বাটা ধীরে ধীরে জুতা শিল্পের ধারক হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে থাকে। বাটা জিলিন শহরে প্রথম জুতার এক্সক্লুসিভ স্টোর চালু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় বাটা কোম্পানি সেনাদের জুতা সরবরাহের কাজ পায় যা তারা সফলতার সাথে সম্পন্ন করে। জুতা সরবরাহের পর বেচে যাওয়া কাঁচামাল দিয়ে বাটা কোম্পানি গরীবদের জন্য সস্তা দামের জুতা বাজারে ছাড়ে যার জন্য বাটার জনপ্রিয়তার পালে একটু বাতাস জোগানের কাজ করে। ১৯১৮ সালে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে সারা ইউরোপজুরে মন্দাভাব শুরু হয়। এর কবল থেকে বাটাও রক্ষা পায় না। কোম্পানি ক্রমাগত লস দিতে শুরু করে। কর্মী ছাটাইয়ে উপক্রম হয়। এ অবস্থা থেকে উন্নতির জন্য টমাস যে বাটা এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেয় যা বাটা কোম্পানিকে জীবন-মরণ প্রশ্নের সম্মুখীন করে। টমাস তার কোম্পানির জুতার দাম অর্ধেক করে দেয়। সবাই তাকে মুর্খ বলে উপহাস কতে শুরু করে। কিন্তু বাটা কোম্পানি কারো উপহাসের কাছে নতি স্বীকার করে না। কোম্পানি তাদের নিবেদিত কর্মীদের নিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যেতে থাকে। বাটার এই সাহসী সিদ্ধান্তের ফল আশ্বর্যজনকভাবে পেতে শুরু করে। চারিদিকে মন্দাভাব চলার পরও বাটার অর্ধেক দামের জুতো কেনার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাটা জুতার চাহিদা এত বেড়ে যায় যে বাটা কোম্পানি বাধ্য হয় তাদের উৎপাদন ১০গুন বৃদ্ধি করার জন্য। বাটা কোম্পানির জুতোর জনপ্রিয়তা আকাশ ছুয়ে যায় আর এই সুযোগে বাটা তাদের ব্যবসা ২৭টি দেশে প্রসারিত করে। বাটার ছোঁয়া তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশেও এসে লাগে। বাটার এক্সক্লুসিভ স্টোরের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। বাটা তাদের পন্য সরবরাহের জন্য মোটর সাইকেল, বাস, প্লেন সহ সকল পরিবহনের সদ্ব্যবহার করে। বাটা তাদের ব্যবসার এলাকাকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে এবং ফ্যাক

No comments:

Post a Comment

১০ হাজার টাকার মধ্যে কোন জুতা কিনা উচিত?

  আপনি যদি  ১০ হাজার টাকার মধ্যে কোন জুতা কিনতে চান, তাহলে আপনার জন্য কিছু পরামর্শ দিতে পারি। প্রথমে, আপনার জুতা কেনার উদ্দেশ্য কি তা বেছে ন...